
তিনি আরও বলেন ‘হে হাবীব! আপনি না হলে স্বীয় প্রভুত্বও প্রকাশ করতাম না।’ (হাদীসে কুদসী)
আল্লাহ পাক মহাজগতের তামাম কিছু সৃষ্টির আগে নূরে মুহাম্মদী (সা.)-এর নূর সৃষ্টি করেন। এই মর্মে বিশিষ্ট সাহাবী হযরত জাবির (রা.) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আমি কদা আরজ করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ (সা.)! আমার পিতা-মাতা আপনার প্রতি কোরবান হোক, আপনি আমাকে অবহিত করুন- আল্লাহ পাক সর্বপ্রথম কোন বস্তু সৃষ্টি করেন? তিনি উত্তরে বলেন, হে জাবির! আল্লাহ পাক সব বস্তুর আগে তোমার নবীর নূর সৃষ্টি করেন, যা আল্লাহর বিশেষ কুদরতের সৃষ্টি নূর থেকে। অতপর সে নূর আল্লাহর কুদরতে তাঁর ইচ্ছায় নিয়ন্ত্রণাধীন ছিল। ওই সবল ওহ-কলম, বেহেশত-দোযখ, আসমান-জমিন, গ্রহ-নক্ষত্র, মানব-জিন এবং ফেরেশতা কিছুই ছিল না। (যুরকানী)
হযরত আবূ হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত আছে, রাসূল কারীম (সা.) হযরত জিব্রাঈল (আ.) কে জিজ্ঞেস করেন, হে জিব্রাঈল! আপনার বয়স কত? তিনি উত্তর দিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি এ সম্পর্কে কিছু জানি না। তবে এতোটুকু বলতে পারি যে, চতুর্থ পর্দায় (আসমানে) একটি সিতারা (উজ্জ্বল নক্ষত্র ) আছে, যা প্রতি সত্তর হাজার বছর পর পর সেখানে উদিত হয়। আমি তা এ যাবৎ ৭০ (সত্তর) হাজার বার উদিত হতে দেখেছি। এতদশ্রবণে হুজুর (সা.) বললেন, হে জিব্রাঈল! শপথ মহান আল্লাহর ইজ্জতের, আমি সেই সিতারা। (বুখারী শরীফ)
মহান-গরীয়ান আল্লাহ তাঁর সৃষ্টির মহাপরিকল্পনানুযায়ী সৃষ্টির রহস্যে নূরে মুহাম্মদী (সা.)-এর সৃষ্টি সর্বপ্রথম ঘটালেন। সেই মহামানব আল্লাহর কাছে কত প্রিয় হতে পারে, তা সহজে অনুনেয় নয়। অথচ আমরাই তাঁর উম্মত হওয়ার মহা সৌভাগ্য লাভ করেছি। এজন্য তাঁর নব্যুয়তের পর যত মানুষের আগমন এই পৃথিবী নামের গ্রহটিতে ঘটবে, তাদের সবার অত্যাবশ্যকীয় করণীয় হবে রাসূল (সা.)- এর আনুগত্য ও তাঁর অনুসরণ করা।
এ আনুগত্যের ফলাফল জানিয়ে আল্লাহ বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করবে, আল্লাহ তাকে এমন জান্নাতে দাখিল করবেন, যার নিম্নদেশ হতে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত হতে থাকবে এবং তারা অনন্তকাল উহাতে অবস্থান করবে।’ (সূরা নিসা : ১৩)
আর যে আল্লাহ ও তার রাসূলকে অমান্য করে (তাঁদের আনুগত্য করে না) তার জন্য রয়েছে জাহান্নামের অগ্নি। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে।’ (জ্বিন : ২৩)
রাসূল পাক (সা.) বলেছেন, সর্বোত্তম বাণী হচ্ছে আল্লাহর কোরআন এবং সর্বোত্তম পথপ্রদর্শন হচ্ছে মুহাম্মদের পথপ্রদর্শন (মুসলিম শরীফ)
হযরত আবূ হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, নবী কারীম (সা.) ইরশাদ করেছেন, সেই মহান আল্লাহর শপথ, যার মুষ্ঠির মধ্যে মুহাম্মদের প্রাণ, এই উম্মতের মধ্যে যে লোক আমার সম্পর্কে শুনবে ও জানতে পারবে; সে ইহুদি হোক কিংবা নাসার হোক, আর আমি যে দ্বীনসহ প্রেরিত হয়েছি, তার প্রতি ঈমান না এনেই সে যদি মৃত্যুমুখে পতিত হয়, সে নিশ্চয়ই জাহান্নামের অধিবাসী হবে। (মুসনাদে আহমদ)
তাফসীর এসেছে, হুজুর (সা.)- এর আবির্ভাবের পর যে লোক তাঁর প্রতি ঈমান আনবে না, সে লোক কোন সাবেক শরীয়ত অথবা কিতাবের কিংবা অন্য কোন ধর্ম ও মতের পরিপূর্ণ আনুগত্য একান্ত নিষ্ঠাপরায়ণভাবে করতে থাকা সত্ত্বেও সে কস্মিনকালেও মুক্তি পাবে না। (তাফসীরে মা’আরেফুল কোরআন)।
যারা আল্লাহকে পূর্ণ বিশ্বাস করবে, তাদের কোরআনকেও মানতেই হবে। আর কোরআনকে মানতে হলে মহানবী (সা.)- এর আনুগত্য স্বীকার করতেই হবে। রাসূল (সা.)-এর আনুগত্যের বাস্তব রূপ হলো পূর্ণাঙ্গভাবে তাঁর অনুসরণ ও অনুকরণ করা। আল্লাহকে মানবে অথচ রাসূল (সা.) কে মানবে না এবং তার অনুসরণ করবে না; সেটা কোন ধর্মই হতে পারে না।