বিয়ের আগেই জেনে নিন, নাহলে পস্তাতে হবে!



বিয়ে মানেই চিরস্থায়ী সম্পর্কের বন্ধন। বিয়ে নতুন এক জীবনের সূচনাও বটে! নতুন সম্পর্কে আরেকটি পরিবারের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে ফেলা, মানিয়ে নেয়া, একজনকে নিজের করে ভাবা, নতুন দায়িত্ববোধ- এমন অসংখ্য বিষয় নিয়ে উদ্বিগ্নতায় আচ্ছন্ন থাকে মন।

অতি উদ্বিগ্নতা কখনো মানসিক অসুস্থতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই বিয়ের আয়োজন শুধু কেনাকাটার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে, বর-কনের শারীরিক ও মানসিক প্রস্তুতিটাতেও সমান জোর দেয়া দরকার। এছাড়াও আইনি বিভিন্ন দিক। বিয়ের আগে ও পরের শারীরিক-মানসিক প্রস্তুতি ও অন্যান্য বিষয়ে জানতে সঙ্গে থাকুন।

মানসিক প্রস্তুতি
বিয়ের আগে ছেলে-মেয়ের মানসিক প্রস্তুতি পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মেহতাব খানম।

বিয়ের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর পরই ছেলে-মেয়ের মানসিক ঘাটতি বেড়ে যায়। নিজের মধ্যে জন্ম নেয় হতাশা আর কৌতূহলপূর্ণ হাজারো প্রশ্ন। তাই প্রেমের বিয়ে বা পারিবারিক বিয়ে, উভয় ক্ষেত্রে ছেলে-মেয়েকে অবশ্যই সম্পর্কের বিষয়ে শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। দুজনকেই পরস্পরের পরিবারের সঙ্গে মানিয়ে চলার মানসিকতা রাখতে হবে।

তবে পরিবারের অমতে বিয়ে করার আগে অবশ্যই পরিবারকে বিয়ের গ্রহণযোগ্যতা বুঝানোর চেষ্টা করা যেতে পারে। মনে রাখতে হবে, বিয়েটা এক-দু’দিনের জন্য নয়। তাই বিয়ের পূর্বকালীন সম্পর্কেও পরস্পরের চেনা-জানায় যথেষ্ট স্বচ্ছতা থাকা চাই। নিজের স্বভাবের কোনো নেতিবাচক দিক থাকলে বিয়ের আগেই সেগুলো সংশোধনের চেষ্টা করা জরুরি। নিজস্ব কিছু বিষয় যদি থেকেই থাকে তাহলে বিয়ের আগে পারস্পরিক বোঝাপড়া করে নেয়া ভালো। কারণ, একেকজনের জীবনযাপন একেকভাবে নির্ধারিত হয়। প্রতিটি পরিবারের আলাদা নিয়মকানুন, আচার-ব্যবহার থাকে। এসব ক্ষেত্রে শুধু মেয়েরাই মানিয়ে চলবে, তা নয়। ছেলেটিকেও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে।

ছেলেদের অনেকেই মনে করেন, বিয়ে করতে অনেক টাকার প্রয়োজন, এটা কখনোই ঠিক নয়। কেননা আপনি যতটা আয় করছেন তার মধ্যেই যদি নিজে সন্তুষ্ট থাকেন তাহলে সঙ্গীকে সুখী করাও কাছে অবাস্তব কিছু হবে না। তাই আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের তারতম্য ঠিক রেখেই বিয়ে নিয়ে ভাবতে হবে।

বিয়ের পর ছেলেমেয়ের উভয়ের স্বাধীনতা কমে যায়- সমাজে এ ধারণাটি এখনো প্রবল। সেক্ষেত্রে নিজেকেই প্রশ্ন করুন, সমাজের জন্য আপনি নিজেকে কতটুকু উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে পেরেছেন। ফলে সংসার বা সঙ্গীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল হলেই নিজের স্বাধীনতা কমে যায়, এমন ধারণাও দূর হয়ে যাবে।

বিয়ে মানেই ঘরে অশান্তি বলে অনেকের ধারণা। বিষয়টি মনে করার কোনো উপযুক্ত কারণ হয়ত নেই। কারণ, আপনি যখন আপনার সঙ্গীকে তার ভুলত্রুটিসহ মেনে নিয়েছেন, তখন তার সমস্যাগুলোর সমাধা করার দায়িত্বটাও আপনি নিয়েছেন। তাই সংসার নিয়ে হতাশামুক্ত থাকুন, নিজেদেরকে মানিয়ে নিতে চেষ্টা করুন। বিয়ে পরবর্তী আপনার সব সমস্যা সঙ্গীর সঙ্গে ভাগ করে নিন। সবসময় মনে রাখতে হবে দু’জনের মেলবন্ধনেই কিন্তু এ সম্পর্কের সৃষ্টি।

শারীরিক প্রস্তুতি
বিয়ের আগে মানসিক প্রস্তুতি চাই। সেই সঙ্গে ছেলে-মেয়ের শারীরিক প্রস্তুতিটাও থাকা চাই। তাই বিয়ের আগে বা পরে একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারই আপনার সুপরামর্শকের ভূমিকা পালন করতে পারে। বিয়েপূর্ব শারীরিক প্রস্তুতিটা কেমন হওয়া চাই এ নিয়ে পরামর্শ দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালের মনোরোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. সালাউদ্দিন কাউসার বিপ্লব।

বিয়ে দীর্ঘমেয়াদি একটি বিষয়। তাই যেনতেন করে বিষয়টি একেবারেই কাটিয়ে দেয়া যায় না। বিয়ের আগে ছেলেমেয়ের বয়স বেশি না কম, শারীরিক উচ্চতা কত, ওজন কত ও রক্তচাপ কেমন ইত্যাদি পরীক্ষার মধ্যেমেই জানা যায়। আবার মেয়েদের ক্ষেত্রে শারীরিক সমস্যা, হেপাটাইটিসসহ সব টিকা দেয়া আছে কি না, এসব বিষয়েও জানা যায়। এছাড়াও তাদের কেউ ধূমপান বা অন্য কোনো নেশায় আসক্ত কি না সে বিষয়েও নিশ্চিত ধারণা পাওয়া যায়। তাই বিয়ে করার আগে ছেলেমেয়ে উভয়কেই লজ্জা পরিহার করে সুখী জীবনের উদ্দেশ্যে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে নেয়া উচিৎ।

বিয়ের ক্ষেত্রে বয়স খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ছেলেদের ক্ষেত্রে বেশি বয়সে বিয়ে হলে ইনফার্টিলিটি বা বন্ধ্যাত্ব হতে পারে। আবার মেয়েদের বেশি বয়সে বিয়ে হলে সন্তান শারীরিক-মানসিক প্রতিবন্ধী হওয়াসহ ত্রুটি নিয়ে জন্ম নেয়ার আশঙ্কা থাকে। সেক্ষেত্রে মেয়েদের ত্রিশ বছরের পর প্রথম বাচ্চা নেয়াটা খুবই ঝুঁকির কারণ হয়ে যায়। তবে মেয়েদের অল্প বয়সে বিয়ে হলেও বেশ কিছু স্বাস্থ্য ঝুঁকি থেকে যায়। অল্পবয়সী মেয়েদের ক্ষেত্রে গর্ভধারণটা খুবই ঝুঁকির। তাই বিয়ের জন্য ছেলেমেয়ের উভয়ের বয়স বিবেচনা করাটা খুব জরুরি একটি বিষয়।

আমাদের শরীরে বংশগত রোগের প্রকোপ বেশি দেখা যায়। এর মধ্যে রয়েছে থ্যালাসেমিয়া, মাসকুলার ডিসট্রফি (মাংসপেশীতে একধরনের দুর্বলতা), স্নায়ুর বিশেষ কয়েকটি অসুখ, এপিলেপ্টিক ডিজঅর্ডার (মৃগী রোগ), মানসিক অসুস্থতা (যেমন: সিজোফ্রেনিয়া, ডিপ্রেশন, সিস্টিক ফাইব্রোসিস), বিশেষ কয়েক ধরনের ক্যানসার (যেমন: ব্রেস্ট ক্যানসার, ফুসফুসের ক্যানসার, কোলন ক্যানসার), কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ (উচ্চ রক্তচাপ ও স্ট্রোক), ডায়াবেটিস, অস্টিওপোরোসিস, আর্থ্রাইটিস, স্থূলতা, অ্যাজমা, গ্লুকোমা ইত্যাদি। এসব রোগের যাবতীয় পরীক্ষা বিয়ের আগেই করে নেয়া উচিৎ। এর যেকোনো রোগ ধরা পড়ার সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা নেয়া উচিৎ।

এছাড়াও শারীরিক আরো সমস্যা থাকতে পারে। সিফিলিস, গনোরিয়া, জেনিটাল হারপিস, স্যানক্রয়েড ও রক্ত বাহিত রোগ এসব কিছুর চিকিৎসা বিয়ের আগেই করে নেয়া প্রয়োজন।
Share this article :
 
Helped By : WWW.KASPERWINDOW.TK | KasperWindowTemplate | Download This Template
Copyright © 2011. আমার কথা ঘর - All Rights Reserved
Template Created by Aehtasham Aumee Published by KasperWindow
Proudly powered by Blogger