।০৭ । তবে শুরু হোক।

সতর্কতা:

ঔষধ খেলেই রোগ নিরাময় হয় না, সঙ্গে কিছু নিয়ম-নিষেধও মানতে হয়। তেমনি শুধু যোগ-ব্যায়াম অভ্যাস করলেই সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হওয়া যায় না, কিছু বিধিনিষেধ মেনে চলতে হয় বৈ কি। নিয়মিত যোগ-ব্যায়াম অভ্যাসে শরীর সুস্থ ও কর্মক্ষম থাকে, এ ব্যাপারে বিন্দুমাত্র সন্দেহের অবকাশ নেই। কিন্তু সাথে চাই পরিমিত ও যতদূর সম্ভব নিয়মিত আহার, বিশ্রাম, সংযম, নিয়মানুবর্তিতা, আত্মবিশ্বাস, অটুট মনোবল ও একাগ্রতা।

তাহলে চলুন শুরু করি। তবে নিয়মিত যোগাভ্যাসকারীদের জন্য কয়েকটি বিষয় মনে রাখা বিশেষ প্রয়োজন। তা হচ্ছে:

০১) ৫/৬ বছর বয়স থেকে শুরু করে জীবনের শেষদিন পর্যন্ত যোগ-ব্যায়াম অভ্যাস করা যায়। শুধু প্রয়োজন অনুযায়ী কয়েকটি আসন বেছে নিতে হবে। সব বয়সে সব রকম আসন করা যায় না। অল্পবয়সী ছেলে-মেয়েদের কোন আসন দুইবারের বেশি করা ঠিক নয়। ছেলেদের ১৪/১৫ বছর বয়েসের পূর্বে আর মেয়েদের ঋতু প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত প্রাণায়াম ও মুদ্রা অভ্যাস করা উচিৎ নয়।
০২) সকাল, সন্ধ্যা ও স্নানের পূর্বে বা রাত্রে যে কোন সময় যোগ-ব্যায়াম করা যায়। তবে সে সময় যেন ভরপেট না থাকে। অল্প কিছু খেয়ে আধঘণ্টা খানেক পরে আসন করা যেতে পারে, কিন্তু প্রাণায়াম বা মুদ্রা খালি পেটে অভ্যাস করাই বাঞ্ছনীয়। প্রাতঃক্রিয়াদির পর আসন করা ভালো। তবে যাদের কোষ্ঠবদ্ধতা, পেট ফাঁপা প্রভৃতি রোগ আছে, তারা সকালে ঘুম থেকে উঠেই বিছানায় কয়েকটি নির্দিষ্ট আসন ও মুদ্রা করতে পারে। যাদের অনিদ্রা-রোগ আছে, রাত্রে খাবার পর শোবার পূর্বে কিছুক্ষণ বজ্রাসন করলে ভালো ফল পাওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া ভরপেট খাওয়ার পরও কিছুক্ষণ বজ্রাসনে বসলে খাদ্য হজম বা পরিপাকক্রিয়া সহজতর হতে পারে।
০৩) যাদের শরীরে কোন রোগ বা অসমতা রয়েছে অথবা যাদের বয়স অত্যন্ত কম বা বেশি, তাদের জন্য অভিজ্ঞ ব্যক্তির পরামর্শ নেয়া বাঞ্ছনীয়। শুধু লেখা বা বই পড়ে বা ছবি দেখে তাদের যোগ-ব্যায়াম করা ঠিক নয়। এতে উপকারের পরিবর্তে অপকার হবার সম্ভাবনাই বেশি।
০৪) আসন, মুদ্রা বা প্রাণায়ামে একটি ভঙ্গিমায় বা প্রক্রিয়ায় একবারে যতটুকু সময় সহজভাবে করা যায় বা থাকা যায়, ঠিক ততটুকু সময় করা বা থাকা বাঞ্ছনীয়। তবে কোন ক্ষেত্রে কয়েকটি নির্দিষ্ট আসন ছাড়া একবারে এক মিনিটের বেশি থাকা উচিৎ নয়। পদ্মাসন, ধ্যানাসন, সিদ্ধাসন ও বজ্রাসনে ইচ্ছেমতো সময় নেয়া যেতে পারে।
০৫) একবারে ৭/৮টির বেশি আসন অভ্যাস করা ঠিক নয়। আসনের সঙ্গে বয়স অনুযায়ী ও প্রয়োজনমতো দু’একটি প্রাণায়াম, মুদ্রা অভ্যাস করলে অল্প সময়ে আরো ভালো ফল পাওয়া যায়। এক একটি আসন বা মুদ্রা অভ্যাসের পর প্রয়োজনমতো শবাসনে বিশ্রাম নিতে হবে। ৫/৭ মিনিট খালি হাতে কিছু ব্যায়ামের পর আসন বা মুদ্রা করলে ফল খুব দ্রুত পাওয়া যায়। কিন্তু কোন শ্রমসাধ্য কাজ বা ব্যায়ামের পর বিশ্রাম না নিয়ে কোন প্রকার যোগ-ব্যায়াম করা উচিৎ নয়। সপ্তাহে একদিন বিশ্রাম নেয়া উচিৎ।
০৬) আসন অভ্যাসকালে জোর করে বা ঝাঁকুনি দিয়ে কোন ভঙ্গিমা বা প্রক্রিয়া করা ঠিক নয়। আসন অবস্থায় মুখে যেন কোন বিকৃতি না আসে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
০৭) আসন অভ্যাসকালে শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক থাকবে। কিন্তু মুদ্রা বা প্রাণায়ামে নিয়মানুযায়ী শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
০৮) কম্বল, প্যাড বা পাতলা তোষকের উপর আসন অভ্যাস করা বাঞ্ছনীয়। শক্ত মাটি বা পাকা মেঝেতে অভ্যাস করলে যে কোন সময়ে দেহে চোট লাগতে পারে।
০৯) আলো-বাতাসহীন বা বদ্ধ ঘরে যোগ-ব্যায়াম অভ্যাস করা ঠিক নয়। এমন জায়গায় অভ্যাস করার চেষ্টা করতে হবে, যেখানে বায়ুর সঙ্গে প্রচুর অক্সিজেন নেয়া যায়।
১০) ১২/১৩ বছরের উপর এবং ৪৫/৪৬ বছরের নিচে (স্বাস্থ্যানুযায়ী বয়সসীমা কম-বেশি হতে পারে) মেয়েদের স্বাভাবিক কারণে মাসে ৪/৫ দিন কোন আসন করা ঠিক নয়। তবে ধ্যানাসন, শবাসন প্রভৃতি অভ্যাস করা যায়।
১১) মেয়েদের ক্ষেত্রে সন্তানসম্ভবা হলে তিন মাস পর্যন্ত কিছু সহজ আসন বা প্রাণায়াম করা যেতে পারে, কিন্তু মুদ্রা অভ্যাস একেবারে করা উচিৎ নয়। সন্তান প্রসবের তিন মাস পর আবার ধীরে ধীরে সব আসনাদি অভ্যাস করা বাঞ্ছনীয়। গর্ভাবস্থায় সকাল ও সন্ধ্যায় খোলা জায়গায় পায়চারি করা বিশেষ উপকারী।
১২) আসনাদি অভ্যাসকালে এমন কোন পোশাক পরা উচিৎ নয় যাতে রক্ত চলাচলে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়।
১৩) যোগ-ব্যায়াম অভ্যাসকালে ‘কথা বলা’ বা অন্যমনস্ক হওয়া ঠিক নয়। কারণ মনের সঙ্গে দেহের ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধ যোগ-ব্যায়ামের মূলমন্ত্র। একাগ্রতাই অভীষ্ট ফল এনে দিতে পারে।
১৪) যোগ-ব্যায়ামে তাড়াতাড়ি ফল পাবার আশা করা ঠিক নয়। এতে বিশ্বাস ও ধৈর্য্যের একান্ত প্রয়োজন। নিয়মিত ও নিয়মমতো যোগ-ব্যায়াম অভ্যাসে সুফল আসবেই।
১৫) যদি তামাকের অভ্যাস বা মাদসাক্তি থাকে, বর্জন করুন।
১৬) যতটা সম্ভব মন প্রফুল্ল রাখা বাঞ্ছনীয়। কুচিন্তা বা দুশ্চিন্তা যেন মনে না আসে।



মনে রাখতে হবে, আসন, মুদ্রা ও প্রাণায়াম সব প্রক্রিয়ারই মূল লক্ষ্য এক- শরীরকে সবল, সুস্থ ও কর্মক্ষম রাখা। শুধু পথ আলাদা। আসন ও মুদ্রার প্রধান কাজ দেহের ধমনী, শিরা, উপশিরা, স্নায়ুজাল, পেশী, শ্বাস-যন্ত্রাদি ও গ্রন্থিগুলোকে সবল ও সক্রিয় রাখা এবং পরিপাক ও নিঃসরণ ক্রিয়াকে ঠিকভাবে পরিচালিত করা। আর প্রাণায়ামের প্রথম ও বিশেষ প্রভাব শ্বাস-যন্ত্রাদির উপর, তারপর দেহের অন্যান্য অংশে। প্রাণায়ামকে দৈহিক ব্যায়াম না বলে একটি উত্তম শ্বাস ব্যায়াম বলা যেতে পারে। প্রাণায়ামের উদ্দেশ্য হলো শ্বাসগতির নিয়ন্ত্রণ। প্রাণায়ামে মন একাগ্রভাবে শ্বাসগতির অনুগামী থাকবে।
(তথ্যসুত্র: সচিত্র যোগ-ব্যায়াম/সবিতা মল্লিক)

উপরে বর্ণিত বিষয়গুলো যদি নিজস্ব মনোভঙ্গির সাথে বিপরীতার্থক না হয়ে সহমতপ্রবণ হয়, তাহলে ধরে নিতে পারি যে আমরা এখন ইয়োগা বা যোগাভ্যাস চর্চায় প্রস্তুত। এবং সে ক্ষেত্রে আমরা বিভিন্ন যোগাসন, প্রাণায়াম ও মুদ্রার অভ্যাস-অনুশীলনে মনোনিবেশ করতে পারি।
Share this article :

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

:-?

আপনার একটি মতামত বা মন্তব্য আমাদের মত লেখকদেরকে ভালো কিছু লিখার অনুপ্রেরোনা যোগাই।তাই প্রতিটি পোস্ট পড়ার পর নিজের মতামত বা মন্তব্য জানাতে ভুলবেন না।তবে এমন কোন মতামত বা মন্তব্য করবেন না যাতে আমাদের মত লেখকদের মনে আঘাত করে !!

 
Helped By : WWW.KASPERWINDOW.TK | KasperWindowTemplate | Download This Template
Copyright © 2011. আমার কথা ঘর - All Rights Reserved
Template Created by Aehtasham Aumee Published by KasperWindow
Proudly powered by Blogger