গুরুত্বপূর্ণ দুটি যোগাসন

শরীর, মন সুস্থ ও সবল রাখতে এবং রোগ মুক্তিতে যোগব্যায়ামের ভূমিকা আজ সুপ্রতিষ্ঠিত। দ্রাবিড় সভ্যতায় আজ থেকে ৫ হাজার বছর আগে এই ব্যায়ামের উৎপত্তি ঘটে। দ্রাবিড় সাধকদের দৈনন্দিন জীবনের একটি অংশ ছিল এই ব্যায়াম। ভারতীয় উপমহাদেশে বহুল জনপ্রিয় এই যোগব্যায়াম, সারা বিশ্বে ইয়োগা নামেও সুপরিচিত। আজকে এখানে দুইটি গুরুত্বপূর্ণ যোগাসন নিয়ে আলোচনা করা হবে।
০১. গোমুখাসনঃ এ আসনটির নাম গোমুখাসন হওয়ার কারণ হলো, এই আসন অবস্থায় দেহটি গরুর মুখের ন্যায় আকৃতি ধারণ করে থাকে।
উপকারিতাঃ
যোগাসন গুলোর মধ্যে অন্যতম এ আসনটির রয়েছে অনেক উপকারিতা। এ আসন চর্চায় বাঁকা মেরুদণ্ড সোজা ও সরল হয়। আসনটি কুচিন্তা ও দুশ্চিন্তা দূরীকরণে অধিক কার্যকর। হাত ও পায়ের পেশী এবং স্নায়ুজাল সবল ও সক্রিয় রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া আসনটির নিয়মিত অভ্যাস রাখলে তা অর্শ, মূত্রপ্রদাহ, বাত বা সায়টিকা হবার হাত থেকে বাঁচায়। হাত ও কাঁধের সন্ধিস্থলের ব্যায়ামের জন্য এই আসনটি বিশেষ কার্যকর। আসনটির অভ্যাস রাখলে মেয়েদের সহজে কোন স্ত্রী-ব্যাধি আক্রমণ করতে পারে না। যারা সারা জীবন অবিবাহিত অবস্থায় কাটাতে চান, তাদের এই আসনটি অভ্যাসে রাখা উচিত।
কার্যপদ্ধতিঃ
jm 01
jm2
প্রথমে শিরদাঁড়া সোজা করে পা দু’টো সামনের দিকে ছড়িয়ে বসুন। এবার বাঁ পা হাঁটুর কাছ থেকে ভেঙ্গে পায়ের গোড়ালি, ডান উরুর কাছে মেঝেতে রাখুন (চিত্র দেখুন)। একই ভাবে এবার ডান পা দু’টোও হাঁটুর কাছ থেকে ভেঙ্গে, বাঁ পায়ের উপর দিয়ে নিয়ে উরুর কাছে মেঝেতে রাখুন। এখন ডান হাত মাথার উপর তুলে কনুইয়ের কাছ থেকে ভেঙে হাতের তালু পিঠে মেরুদণ্ডের ঠিক উপরে উপুর করে রাখুন এবং বাঁ হাত কনুইয়ের কাছ থেকে ভেঙে পেছন দিকে নিয়ে ডান হাতের আঙুল ধরুন (১ নং চিত্রমত)। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে ২০ সেঃ থেকে ৩০ সেঃ এ অবস্থায় থাকুন। এরপর আস্তে আস্তে হাত এবং পা আলগা করে বিশ্রাম নিন। এবার হাত-পা বদল করে আসনটি নিয়ম মত আবার করুন অর্থাৎ এবার ডান পা নীচে, বাঁ পা উপরে রেখে বাঁ হাত উপরে এবং ডান হাত নীচের দিকে থাকবে। এভাবে পর্যায়ক্রমে আসনটি ২/৩ বার করুন। এবার ৩০ সেঃ শবাসনে বিশ্রাম নিন বা আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী শবাসনে বিশ্রাম নিন।
বিঃদ্রঃ সাধারণ ভাবে যে পা উপরে অবস্থান করে, অনুরূপ সে হাত উপরে থাকে। অর্থাৎ ডান পা উপরের ভাঁজে থাকলে ডান হাত উপরে থাকে, বাঁ পা উপরে থাকলে বাঁ হাত উপরে। তবে এর উল্টোটাও হতে পারে।
০২. শবাসনঃ
jm3
যোগ কুশলীদের মতে, আসন অভ্যাসের প্রতি পর্যায়ে একবার করে ২০সেঃ থেকে ৩০সেঃ শবাসনে বিশ্রাম নিতে হবে। ইয়োগার কোন একটি আসন বার কয়েক সম্পূর্ণ অভ্যাসের পর পরই শবাসনের মাধ্যমে দেহমনের বিশ্রাম দেয়া যোগব্যায়ামের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। এভাবে একটি যোগাসন অভ্যাসের পর একবার ৩০ সেঃ থেকে ৪৫ সেঃ শবাসনে বিশ্রাম নিলে শরীরের কোন ক্ষতি হয় না বরং অন্য কোন আসনের প্রকৃতি অনুযায়ী দেহের বিশেষ কোন অঙ্গ বা প্রত্যঙ্গে রক্তসঞ্চালন সাময়িক রুদ্ধ বা প্রচুর রক্ত চালিত করার ফলে যে ভিন্নতা প্রয়োগ করা হয়, তাকে পূর্বাবস্থার উন্নততর স্বাভাবিক পর্যায়ে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া হিসেবে শবাসনের চর্চা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
শব অর্থ মৃতদেহ। মৃত ব্যক্তির যেমন তার দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের উপর কোন কর্তৃত্ব বা নিয়ন্ত্রণ থাকে না, তেমনি শবাসন অবস্থায় অভ্যাসকারীর দেহের কোন অংশে তার কোন কর্তৃত্ব থাকবে না। মৃত ব্যক্তির মতো আসনচর্চাকারীকেও কিছুক্ষণের জন্য বাস্তব জগৎ থেকে দূরে সরে যেতে হবে। ব্যক্তি আর ব্যক্তিতে থাকবে না। সমস্ত চিন্তা ভাবনা থেকে মনকে কিছুক্ষণের জন্য দূরে রাখতে হয়। ঠিক এ কারণেই য়োগচর্চাকারী মাত্রই জানেন যে, যোগাসনের মধ্যে সবচেয়ে কঠিন ও দুর্বোধ্য আসন হচ্ছে শবাসন।
উপকারিতাঃ
শবাসন অসম্ভব উপকারী একটি আসন। দীর্ঘ সময় শ্রমসাধ্য কাজের পর অথবা অনিদ্রার পর কিছু সময় এই আসনটি করলে দেহ ও মনের সমস্ত ক্লান্তি ও অবসাদ দূর হয়ে যায়। নতুন জীবনীশক্তি, উদ্যম ও কর্মপ্রেরণা ফিরে আসে। যাদের অত্যধিক শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রম করতে হয়, তাদের আসনটি অবশ্যই করা উচিত। মন ও স্নায়ুতন্ত্র প্রয়োজন অনুযায়ী বিশ্রাম না পেলে স্নায়বিক দুর্বলতা, বধিরতা, দৃষ্টিহীনতা প্রভৃতি নানা কঠিন রোগ হতে পারে। এমনকি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলাও অস্বাভাবিক নয়। ছাত্র-ছাত্রীদের এ আসনটি ‘মৃত সঞ্জীবনী’র মতো কাজ করে বলে অনেকে মনে করেন। বিশেষ করে পরীক্ষার সময় অত্যধিক পড়াশোনার পর এই আসনে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলে অবসাদ, ক্লান্তি দূর হয়ে শুধু যে নতুন উদ্যম ফিরে আসে তাই নয়, স্মৃতিশক্তিও বৃদ্ধি পায়। প্রায় সব আসন অভ্যাসের পর কিছুক্ষণ শবাসনে বিশ্রাম নিতে হয়। কারণ, অন্যান্য আসন অবস্থায় শরীরের নির্দিষ্ট স্থানে প্রচুর রক্ত চলাচল করে। তারপর শবাসনে বিশ্রাম নিলে রক্ত চলাচল আবার স্বাভাবিক হয়ে আসে। রক্তচাপ বৃদ্ধি এবং হৃদরোগীদের জন্য আসনটি অবশ্য করণীয়। মেয়েদের ক্ষেত্রে সন্তান প্রসবের দু’মাস আগে থেকে এবং প্রসবের পর অন্ততঃ দু’মাস দিনে কিছু সময় শবাসনে বিশ্রাম নেয়া উচিত।
কার্যপদ্ধতিঃ
দু’হাত শরীরের দু’পাশে মেলে রেখে সটান চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ুন। হাতের তালু উপর দিকে এবং পায়ের পাতা দু’পাশে একটু হেলে থাকবে (চিত্র মত) অথবা যেভাবে ভালো লাগে সে ভাবেই রাখুন। এবার শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ শিথিল করে দিন। দেহের প্রতিটি জোড়া ও মাংসপেশী আলগা করে দিন। শরীরের কোন অংশে কোন রকম জোর থাকবে না। মন শান্ত, ধীর, চিন্তাশূন্য করুন। মনে করুন আপনার সব চিন্তা, চেতনা, শক্তি, বিশ্বাস এক বিন্দুতে মিলিত হয়েছে। মনে মনে ১ গুনে শ্বাস নিন এবার ২ গুনে শ্বাস ছাড়ুন। এভাবে ৩০ পর্যন্ত গুনুন। আপনার মনকে স্থির ও এক বিন্দুতে রাখতে সংখ্যা গোনার দিকে পূর্ণ মনোযোগ দিন। খেয়াল রাখুন শ্বাস প্রশ্বাস গ্রহণ ও ছাড়া যেন একই ছন্দে হয়। মনে রাখতে হবে, বাস্তব জগৎ থেকে আপনি এখন দূরে আছেন। মনটাকে শিথিল করে অনুভব করুন, আপনার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো এখন আর আপনার নেই, কোথায় আছে তাও জানেন না আপনি।
এবার আপনি ১ থেকে ৮ পর্যন্ত গুনতে গুনতে ধীরে ধীরে চোখ খুলুন। ধীরে ধীরে পায়ের আঙ্গুল ও হাতের আঙ্গুল নাড়ুন। অতঃপর শরীর ইজি হয়ে এলে, আসন ত্যাগ করুন। আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে মনকে চিন্তাশূন্য করে দেহকে শিথিল করে দেহ ও মনকে কিছুক্ষণ সম্পূর্ণ বিশ্রাম দেয়া, তা সে যেভাবেই হোক। শবাসন খুব ভালো ভাবে আয়ত্ত করুন। কেননা সব আসন চর্চা করতেই এই শবাসন লাগবে। যোগব্যায়াম উপকারিতা সত্যিই অনিস্বীকার্য। একবার চর্চা করেই দেখুন, আপনার শরীর ও মনে কেমন প্রশান্তি এনে আপনাকে সফলতা আনতে সহায়তা করে।
সামনে যোগাসনের আরও পোস্ট নিয়ে হাজির হব। আসলে এটি একটি চেইন পোস্টের অংশ। কোনকিছু বুঝতে অসুবিধা হলে বা জানার জন্য অথবা কোন কোন আসন গুলো নিয়ে পড়তে চান জানাতে নীচে মন্তব্য করতে পারেন। আপনাদের সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ।
লিখেছেনঃ মৌনতা

ছবিঃ  ইয়োগাট্রপিক্স.কম, কলোক্রম.কম
Share this article :

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

:-?

আপনার একটি মতামত বা মন্তব্য আমাদের মত লেখকদেরকে ভালো কিছু লিখার অনুপ্রেরোনা যোগাই।তাই প্রতিটি পোস্ট পড়ার পর নিজের মতামত বা মন্তব্য জানাতে ভুলবেন না।তবে এমন কোন মতামত বা মন্তব্য করবেন না যাতে আমাদের মত লেখকদের মনে আঘাত করে !!

 
Helped By : WWW.KASPERWINDOW.TK | KasperWindowTemplate | Download This Template
Copyright © 2011. আমার কথা ঘর - All Rights Reserved
Template Created by Aehtasham Aumee Published by KasperWindow
Proudly powered by Blogger