এখলাস আল্লাহপাকের এক বিশেষ নূর


হে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি ও কল্যাণের সন্ধানী। আপনারা ইবাদতের মধ্যে এখলাসের আলো অর্জন করুন। কেননা, এখলাস হলো আল্লাহপাকের এক বিশেষ নূর। যা তিনি তার মুমিন বান্দার অন্তরে গচ্ছিত রাখেন এবং তদ্বারা তিনি তাকে অন্য বান্দাগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেন। আর এটাই হলো এখলাসের মূল পরিচয়। হে মুমিনগণ, জেনে রাখবেন সব মানুষ খেসারত তথা বিপর্যয় ও নৈরাশ্যের অধিকারী, কিন্তু যারা জ্ঞানী, আমলকারী ও নিষ্ঠাবান তাদের কথা স্বতন্ত্র। নিশ্চয়ই যে এখলাস বা আন্তরিকতায় সততা ও পূর্ণ বিশ্বাস নেই তা উড়ন্ত ধূলিকণার ন্যায় অন্তঃসারশূন্য। আল্লাহপাক বলেন, বান্দাগণকে কেবল এখলাস পূর্ণ ও আনুগত্য করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তারা একনিষ্ঠভাবে আল্লাহমুখী হবে। নামাজ কায়েম করবে, জাকাত প্রদান করবে। বস্তুত এটাই হলো সুপ্রতিষ্ঠিত জীবনব্যবস্থা। অতঃপর এ এখলাস চারভাগে বিভক্ত- (ক) আল্লাহপাকের সম্মানে যাবতীয় আমল এখলাসের সঙ্গে সম্পন্ন করা। (খ) আল্লাহপাকের সম্মানে যাবতীয় আমলের মধ্যে এখলাসের ইচ্ছা করা। (গ) পুরস্কার ও সওয়াব লাভের আশায় আমলে এখলাসের ইচ্ছা করা এবং (ঘ) আমলের মধ্যে স্বচ্ছতা সৃষ্টি করা, যাতে গায়রুল্লাহর ইচ্ছা না হয়। উক্ত চার প্রকার এখলাসের প্রত্যেকটির দ্বারা মুমিন বান্দা সঠিক ইবাদতের অধিকারী হয়।

হজরত আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি হজরত রাসূলে পাককে (সা.) বলতে শুনেছি, কিয়ামতের ময়দানে সর্বপ্রথম যে ব্যক্তির বিপক্ষে ফয়সালা করা হবে ওই ব্যক্তি হলো শহীদ। তাকে হাজির করা হবে। আল্লাহপাক তাকে শাহাদতের নিয়ামত সম্পর্কে অবহিত করবেন এবং সে বুঝতে পারবে। আল্লাহপাক বলবেন, তুমি কী উদ্দেশে এ নিয়ামতের কাজটি সম্পন্ন করেছ? ওই ব্যক্তি উত্তর দেবে, আমি আপনার সন্তুষ্টির জন্য শাহাদাতবরণ করেছি। আল্লাহপাক বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছ, বরং তুমি যুদ্ধ করেছ যাতে করে সমাজের লোক তোমাকে বাহাদুর তথা বীরপুরুষ বলে। মূলত তা বলা হয়েছে। অতঃপর তাকে উপুড় করে টানতে টানতে দোজখে নিক্ষেপ করা হবে।
 দ্বিতীয় ব্যক্তি হলো- এমন ব্যক্তি যে ইলম শিক্ষা করেছে, অপরকে শিক্ষা দিয়েছে এবং কোরআন পড়েছে, তাকে হাজির করা হবে। আল্লাহপাক তাকে ওইসব নিয়ামতের কথা জিজ্ঞাসা করবেন এবং ওহা বুঝতে পারবে। অতঃপর আল্লাহপাক বলবেন, তুমি কী উদ্দেশে এ নিয়ামতের কাজটি সম্পন্ন করেছ? ওই ব্যক্তি উত্তর দেবে, আমি ইলম শিক্ষা করেছি ও শিক্ষা দিয়েছি এবং আপনার সন্তুষ্টির জন্যই কোরআন পাঠ করেছি। আল্লাহপাক বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছ বরং তুমি এ জন্য ইলম শিক্ষা করেছিল যাতে তোমাকে 'আলেম' বলা হয়। মূলত তা বলা হয়েছে। অতঃপর তাকে উপুড় করে টানতে টানতে দোজখে নিক্ষেপ করা হবে।
 তৃতীয় ব্যক্তি হলো- যার রিজিক আল্লাহপাক প্রশস্ত ও বৃদ্ধি করে দিয়েছিলেন এবং দান করেছিলেন তাকে রকমারি ধনদৌলত। তাকে হাজির করা হলে আল্লাহপাক প্রদত্ত নিয়ামতগুলো সম্পর্কে তাকে পরিচিত করা হবে এবং সে সেই সম্পর্কে পরিচিত হবে। অতঃপর আল্লাহপাক বলবেন, তুমি এসব নিয়ামতের কী উদ্দেশ্যে ব্যবহার ও খরচ করেছ? জবাবে সে বলবে, আমি ওইসব সম্পদ আপনার সন্তুষ্টির জন্য ব্যয় করেছি। আল্লাহপাক বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছ, বরং তুমি ওই নিয়ামত এ উদ্দেশ্যে খরচ করেছিলে যাতে করে তোমাকে দানবীর বলা হয়। আর তা বলা হয়েছে। অতঃপর তাকে উপুড় করে টানতে টানতে দোজখে নিক্ষেপ করা হবে। মুসলিম শরিফ।

 হজরত আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসূলে পাক (সা.) বলেন, আল্লাহপাক তোমাদের শরীর ও অবয়বের দিকে তাকান না, বরং তিনি তোমাদের অন্তর ও আমলের দিকে লক্ষ্য করেন। মুসলিম শরিফ। হে দয়াময় আল্লাহ! আপনি অনুগ্রহপূর্বক আমাদের মুখলিছ ও সত্যবাদী দলের অন্তর্ভুক্ত করুন। প্রফেসর মাওলানা মো. সালাহ্উদ্দিন (খতিব, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ)
Share this article :
 
Helped By : WWW.KASPERWINDOW.TK | KasperWindowTemplate | Download This Template
Copyright © 2011. আমার কথা ঘর - All Rights Reserved
Template Created by Aehtasham Aumee Published by KasperWindow
Proudly powered by Blogger