তোকে না ভালবেসে পারা যায় না





ক্যান্সার হাসপাতালের একটি কামড়ায় একটা ছেলে এবং একটি মেয়ে দুষ্টামি করছে। সম্পর্কে ওরা স্বামী-স্ত্রী। ছেলেটির নাম আবির এবং মেয়েটির নাম পরী।
আবিরঃ তুই কি চিরদিনের জন্য আমার বন্ধু হবি?
পরীঃ না তোর শত্রু হব!
আবিরঃ তুই সবসময় এমন কেন? আমার কথার গুরুত্ব দিস না!
পরীঃ আচ্ছা গুরুত্ব দিয়েই বললাম, আমি তোর বন্ধু হব না! তোকে ছেড়ে কয়েকদিন পরেই তো চলে যেতে হবে না ফেরার দেশে। তারপর তুই আমাকে মিস করে কাঁদবি, তখন আমার খুব কষ্ট হবে।
আবিরঃ তুই কি করে ভাবলি যে আমি তোকে কষ্ট পেতে দিব? যেতে যদি হয় দুজন একসাথে যাব।

পরীঃ সবসময় পাগলামি করিস না আবির।
আবিরঃ তুই আমাকে একা ফেলে কখনো যেতে পারবি না।
পরীঃ আমাকে তো আটকে রাখতে পারবি না।
আবিরঃ পাঁকনামি বাদ দে, দুপুরের খাবার খাবি না?
পরীঃ হ্যা, এতদিন তো আমাকে খাইয়ে দিয়েছিস। আজ আমিও তোকে খাইয়ে দিব।
তারপর আবির পরীকে এবং পরী আবিরকে খাইয়ে দেয়।

আবিরঃ পরী
পরীঃ হুম বল
আবিরঃ বাসায় যাবি না?
পরীঃ হসপিটালে বেশি থেকে এটাই নিজের ঘর হয়ে গেছে কিন্তু আজ বাসায় খুব যেতে ইচ্ছে করছে।
আবিরঃ চল যাই! ডাক্তার বলেছে বাসায় যেতে পারবি।
পরীঃ হ্যাঁ, আজ বাসায় গিয়ে অনেক মজা করব।
পরী মনে মনে ভাবল যে বাসায় গিয়েই প্রথমে ওর কাজ হবে ঘর গুছানো। কিন্তু না, বাসায় সবকিছু সুন্দরভাবে গুছানো আছে।

পরীঃ আবির! তুই আবার কবে থেকে এতো গুছানো হলি?
আবিরঃ হলাম, তোকে দেখে।
পরীঃ ভাল, তোর বাসা গুছিয়ে দেয়ার চিন্তা আমার থাকলো না।
আবিরঃ এইযে ম্যাডাম, এইটা কি শুধুই আমার বাসা, আপনার বাসা না?
পরীঃ তোর আর আমার তো একই কথা। যা, ফ্রেস হয়ে নে। আমি দেখি রাতের জন্য কি রান্না করতে পারি।
আবিরঃ চল আজ বাইরে কোখাও গিয়ে ডিনার করি।
পরীঃ না। আমি আজ রান্না করব।
আবিরঃ তোকে বুঝানোর সাধ্য আমার নেই। ঠিক আছে, রান্না কর।
পরীঃ ওকে

রাতের খাবার শেষে দুজন বাইরে বসে অনেক গল্প করল। গল্প করতে করতে অতীতে ফিরে গেল দুজনে।
পরীঃ তোর মনে আছে কোন মাসের কত তারিখ আমাদের প্রথম কথা হয়েছিল?
আবিরঃ মনে হয় জানুয়ারির ৫ তারিখ।
পরীঃ কচু, সেদিন তো আমাদের প্রথম দেখা হয়েছিল।
আবিরঃ তাহলে কত তারিখ ছিল?
পরীঃ নভেম্বরের ১৮ তারিখ।
আবিরঃ বাহ। আর কি কি মনে আছে তোর?


তোদের বাসায় মাঝে মাঝে তোর আব্বু-আম্মুকে দেখতে যাওয়া হত বলে তোকে আমি আগে থেকেই চিনতাম। প্রথম যেদিন তোর ছবি দেখি তোর চোখ আমাকে খুব আকর্ষণ করেছিল। জানি না কি লুকানো ছিল তোর চোখে, কিন্তু আমি বার বার দেখতে ইচ্ছা হত। চেষ্টা করতাম যেন তোর প্রেমে না পরি।
সেই সময়ে আমার ক্যান্সার এর খবর শুনে অনেক বিধ্বস্ত ছিলাম আর মা-বাবা কষ্ট পাবে বলে আমি ওদেরকে বলি নি। আর অন্যদিকে উনারা খালু-খালামনির সাথে কথা বলে তোর আর আমার বিয়ে পাকা করে ফেলে। তারপর আমি তোর ফোন নাম্বার জোগাড় করে তোকে বলি বিয়েতে রাজি না হতে। তুই বললি তুই দেশে এসে আমার সাথে সরাসরি কথা বলে বিয়েতে না করে দিবি। কিন্তু তুই বিয়েতে না তো করলিই না বরং বিয়ের তারিখ এগিয়ে দিলি।
সানির কথা বলে তোকে আটকানোর চেষ্টা করেছিলাম কোন লাভ হয় নি। বিয়ের দিন সকালে বাসা থেকে বের হয়ে সারাদিন বাইরে ঘুরলাম যেন মনে হয় আমি পালিয়ে গেছি। সন্ধ্যায় তোরা আমাকে না পেয়ে চলে গেছিস ভেবে বাসায় গিয়ে দেখি তখনো ছিলি।

আমি রাজি না থাকা সত্বেও তোর সাথে আমাকে বিয়ে দেয়া হল।
আবিরঃ You were smart enough to create all these incidents. But I was smarter than you to know that these were fake! তোর বন্ধু ইরার কাছ থেকে আমি সানি সম্পর্কে জেনেছি। সানিকে তুই একসময় ভালবাসতি কিন্তু ব্রেকাপ হয়ে গেছে। সানিই বিদেশে চলে যাবে বলে ব্রেকাপ করেছিল। সানি সেখানে গিয়ে সিটিজেনশিপ এর জন্য বিয়েও করে। সানির নামে একটা ত্রেট চিঠি এসেছিল আমার বাসায়। অ্যার এটা জে তোর কাজ আমি বুঝতে পারি।
তাছাড়া বিয়ের দিন বাইরে কথায় কথায় গেছিস তাও আমি জানি। কি যেন একটা কথা আছে না! " তুমি চড় ডালে ডালে, আমি চড়ি পাতায় পাতায়।" এই অবস্থা আর কি।
ওইদিন সারাদিন তোর পিছনে ঘুরছি। তুই বাসায় আসার কয়েক মিনিট আগে আমি তোদের বাসায় ঢুকি। প্রথম দেখায় আমিও তোকে ভালবেসে ফেলেছিলাম। তোকে দেখার জন্য মাঝে মাঝে তোর পিছু নিতাম। সেই কারণে তুই যে অসুখের জন্যই বিয়ে করতে চাচ্ছিস না তাও বুঝতে বাকি রইল না।
আমাদের মৃত্যুর সময় সম্পর্কে আমরা কেউ জানি না। মৃত্যু এখন হতে পারে কিংবা একশো বছর পরেও হতে পারে। তাই বলে জীবন চলা বাদ দিয়ে দিতে হবে মনে করলে বোকামি।
পরীঃ তুই কেন আমাকে এত ভালবাসিস?
আবিরঃ তোকে না ভালবেসে পারা যায় না।

(বাস্তবের সাথে এই গল্পের কোন মিল নেই। এর পুরোটাই কাল্পনিক। )


লেখিকা : দিলরুবা আহমেদ পরী
Share this article :
 
Helped By : WWW.KASPERWINDOW.TK | KasperWindowTemplate | Download This Template
Copyright © 2011. আমার কথা ঘর - All Rights Reserved
Template Created by Aehtasham Aumee Published by KasperWindow
Proudly powered by Blogger