পর্দা শরীয়তের একটি গুরুত্বপূর্ণ হুকুম!


মুসলিম নারীর নিরাপত্তা ও সম্মান রক্ষার্থে এবং দুষ্ট লোকের অশিষ্ট আচরণ থেকে তার নিরাপদ রাখতে মহান আল্লাহ পর্দা ফরজ করেছেন। পর্দা যেমন পুরুষদের রক্ষা করে নারীর ফেতনা থেকে, তেমনি নারীকেও রক্ষা করে এ থেকে সৃষ্ট নানা কষ্টদায়ক ব্যাপার থেকে। ইসলামে প্রতিটি মুসলিম নারীর জন্য পরপুরুষের সামনে পূর্ণ পর্দা রক্ষা করা জরুরি। মাহরাম ছাড়া বাকি সবাই পরপুরুষ। মাহরামরা হলেন_ ১. পিতা। ২. দাদা। ৩. স্বামীর পিতা তথা শ্বশুর। ৪. স্বামীর সন্তান তথা বৈমাত্রেয় পুত্র। ৫. নিজের পুত্র। ৬. ভাই। ৮. ভাইপো। ৯. বোনপো। ১০. চাচা-জ্যাঠা। ১১. মামা। দুধপানজনিত মাহরামরা যেমন পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে। (বিস্তারিত দেখুন সূরা নূর : ৩১)।

 যেখানেই কোনো পরপুরুষ থাকবে সেখানে শরয়ী হিজাবের আটটি শর্তের যে কোনোটি লঙ্ঘন করা হারাম। পূর্ণ পর্দার শর্তগুলো

প্রথম শর্ত : অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত মতে, পুরো শরীর ঢাকা। ফেতনার আশঙ্কা থাকলে সর্বসম্মতিক্রমে মুখ ও হাতের তালুদ্বয় ঢাকাও পর্দার অন্তর্ভুক্ত।

 দ্বিতীয় শর্ত : হিজাব নিজেই সৌন্দর্যবর্ধক না হওয়া। যেমন এতটা আকর্ষণীয় রঙের হওয়া যা সবার দৃষ্টি কাড়ে। আল্লাহ বলেন, 'আর মোমিন নারীদের বল, তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করবে। আর যা সাধারণত প্রকাশ পায় তাছাড়া তাদের সৌন্দর্য তারা প্রকাশ করবে না ...।' (সূরা নূর : ৩১)। অতএব পর্দা যখন খোদ নিজেই সৌন্দর্যের আকার ধারণ করবে তা প্রকাশ বৈধ হবে না। তাকে হিজাব বা পর্দাও বলা হবে না। কারণ হিজাব তো সেটিই যা বেগানা পুরুষের সামনে সৌন্দর্য প্রকাশে অন্তরায় সৃষ্টি করে। সুতরাং বোরকা পরেও যারা নিজের সৌন্দর্য প্রকাশে দ্বিধাহীন তারা যেন বিষয়টি ভেবে দেখেন।

 তৃতীয় শর্ত : মোটা ও পুরু হওয়া যাতে সৌন্দর্য দৃশ্যমান না হয়। কারণ হিজাবের উদ্দেশ্য নারীর মুগ্ধ করা সৌন্দর্য পরপুরুষের আড়াল করা। অতএব পোশাক যদি আড়ালকারী না হয় তবে তাকে হিজাব আখ্যায়িত করা যায় না। রাসূল (সা.) বলেন, 'জাহান্নামবাসীর দুটি দল রয়েছে। যাদের আমি এখনও দেখিনি। একদল এমন লোক যাদের হাতে গরুর লেজের মতো লাঠি থাকবে, যা দিয়ে তারা লোকদের প্রহার করবে। আর অন্য দল এমন নারী যারা পোশাক পরেও উলঙ্গ থাকে। তারা অন্যদের তাদের প্রতি আকৃষ্ট করবে, নিজেরাও অন্যদের প্রতি ঝুঁকবে। তাদের মস্তক উটের পিঠের কুঁজের মতো হবে। তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না। এমনকি জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না। অথচ এর ঘ্রাণ অনেক দূর থেকেও পাওয়া যায়।' (মুসলিম : ২১২৮)।

চতুর্থ শর্ত : প্রশস্ত ও ঢিলেঢালা হওয়া। সঙ্কুচিত ও অন্তর্শোভা পরিদৃশ্যকারী না হওয়া। যাতে অঙ্গের আকার বা অবয়ব দৃশ্যমান না হয় এবং দেহের প্রলুব্ধকর অঙ্গ প্রস্ফুটিত না করে। এটিও আগে বর্ণিত হাদিসের নিষেধাজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত।

পঞ্চম শর্ত : কাপড় সুগন্ধিযুক্ত না হওয়া। কারণ তা পুরুষকে আরও বেশি প্রলুব্ধ করে। নারীর আতর ব্যবহারকে ব্যভিচারের পর্যায়ে গণ্য করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, 'প্রতিটি চোখই ব্যভিচারী। আর নারী যখন সুগন্ধি ব্যবহার করে জনসমাগমের পাশ দিয়ে অতিক্রম করে তখন সে এটা-সেটা অর্থাৎ ব্যভিচারী হয়।' (তিরমিজি : ২৭৮৬)।

 ষষ্ঠ শর্ত : পুরুষের পোশাকের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ না হওয়া। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) সেসব পুরুষকে অভিসম্পাত করেছেন, যারা নারীদের পোশাক পরে এবং সেসব নারীকে অভিসম্পাত করেছেন যারা পুরুষের পোশাক পরিধান করে। (আবু দাউদ : ৪০৯৮)।

সপ্তম শর্ত : কোনো আহলে কিতাব তথা ইহুদিণ্ডখ্রিস্টান বা বিধর্মীর পোশাকের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ না হওয়া। কেননা ইসলামী শরিয়ত বিজাতির সাদৃশ্য অবলম্বন নিষিদ্ধ করেছে। পোশাক ও সংস্কৃতিতে তাদের থেকে ভিন্নতা অবলম্বনে উদ্বুদ্ধ করেছে। আবদুল্লাহ ইবনে আমর বিন আস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) আমার গায়ে জাফরান ব্যবহৃত একজোড়া কাপড় দেখে বললেন, 'এসব হলো কাফেরদের পোশাক। তুমি তা পরিধান করো না।' (মুসলিম : ৫৫৫৫)।

অষ্টম শর্ত : প্রসিদ্ধি লাভের পোশাক না হওয়া। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, 'যে ব্যক্তি দুনিয়ায় প্রসিদ্ধি লাভের পোশাক পরবে কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে লাঞ্ছনার পোশাক পরাবেন। অতঃপর সে কাপড়ে তাকে প্রজ্বলিত করবেন।' (ইবনে মাজা : ৩৬০৭)।
প্রসিদ্ধি লাভের পোশাক সেটিই যা পরিধানের উদ্দেশ্য থাকে মানুষের নাম কুড়ানো। মনে রাখতে হবে, হিজাব কোনো প্রতীক নয়। ফ্যাশনের উপকরণ কিংবা সৌন্দর্যবর্ধনের সামগ্রীও নয়। এ এক অবশ্য পালনীয় বিধান। আল্লাহ এ হিজাব ফরজ করেছেন রাসূল (সা.) এর উম্মতের প্রতিটি প্রাপ্ত বয়স্ক নারীর ওপর। এর প্রবর্তক আমরা কেউ নই; খোদ পুরুষ-নারীর স্রষ্টা মহান আল্লাহ। অতএব এ নিয়ে কোনো ভিন্ন মতের সুযোগ নেই। অবকাশ নেই নতুন কিছু আবিষ্কার বা বিকল্প উদ্ভাবনের। আল্লাহ বলেন, 'আর আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কোনো নির্দেশ দিলে কোনো মোমিন পুরুষ ও নারীর জন্য নিজেদের ব্যাপারে অন্য কিছু এখতিয়ার করার অধিকার থাকে না; আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অমান্য করল সে স্পষ্টই পথভ্রষ্ট হবে।' (সূরা আহজাব : ৩৬)।
Share this article :
 
Helped By : WWW.KASPERWINDOW.TK | KasperWindowTemplate | Download This Template
Copyright © 2011. আমার কথা ঘর - All Rights Reserved
Template Created by Aehtasham Aumee Published by KasperWindow
Proudly powered by Blogger