যস্ত নগরের ব্যস্ত নাগরিক আমরা। ব্যস্ততার ফাঁকে হারিয়ে ফেলি শরীর আর মনের সৌন্দর্য। শরীরের সুস্থতা বা সৌন্দর্যের বিষয়টি কিছুটা মাথায় থাকলেও ভুলে যাই আমাদের যে একটা মন রয়েছে, তার কথা। যার সুস্থতা বেশি জরুরি। শারীরিক সুস্থতা, সৌন্দর্য আর মানসিক উন্নতির জন্য তাই প্রতিদিন শরীরচর্চা অর্থাৎ ব্যায়াম করা খুব বেশি দরকার। শরীর আর মনকে একসূত্রে গেথে আপনাকে সুন্দর আর প্রাণবন্ত করে তুলতে যোগব্যায়ামের জুড়ি নেই। বলছিলেন, বাংলাদেশ ইয়োগা অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মুহাম্মদ হারুন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্রের প্রশিক্ষক নাজনীন সুলতানা বলেন, ‘আজকাল সবাই স্বাস্থ্য-সচেতন। শারীরিক ও মানসিক বিকাশের পাশাপাশি যোগব্যায়াম সৌন্দর্য বিকাশে ভূমিকা রাখে।’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া তুলির অনেক দিন ধরেই পিঠের মেরুদণ্ডে ব্যথা ছিল। দুই মাস ধরে যোগব্যায়াম অভ্যাসের মাধ্যমে বেশ কাটিয়ে উঠেছেন সে সমস্যাটি।
শামসুন্নাহার হলের রুমানার ক্লাস, খাওয়া, ঘুম—এই করতে করতে বেশ মুটিয়ে গিয়েছিলেন। যোগব্যায়াম অনুশীলন করে এরই মধ্যে শরীরের বাড়তি মেদ অনেকটাই কমিয়ে ফেলেছেন তিনি। নাজনীন সুলতানা বলেন, এখন ছাত্রছাত্রীদের চেয়ার-টেবিলে বসে থাকতে থাকতে অনেকেরই মেরুদণ্ডে ব্যথা হচ্ছে। এ ছাড়া বাড়তি মেদ ও ক্লান্তি এসব সমস্যাও দেখা দিচ্ছে। এ জন্যই যোগব্যায়ামে বেশ উপকার পাওয়া যায়। স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্যের জন্য যোগব্যায়ামের বেশ কিছু আসন রয়েছে। যেমন—অর্ধচন্দ্রাসন, বদ্ধকোলাসন, উপবিষ্ট কোলাসন, মৎস্যাসন প্রভৃতি। বাড়তি মেদ ঝরাতে কোমর ও হিপের জন্য অর্ধমৎসোন্দ্রাসন, পেটের মেদের জন্য উত্থানপদাসন, বৃত্তাকারাসন যথেষ্ট ভূমিকা রাখে। অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা ও মানসিক চাপের কারণে অনেকের চোখের নিচে কালি পড়ে। যোগব্যায়ামের মাধ্যমে এ কালি দূর করা সম্ভব। মুখের সৌন্দর্যের জন্য করা যেতে পারে শশাঙ্গাসন, অর্ধকুর্মাসন। মেয়েলি সমস্যা দূর করার ক্ষেত্রে বদ্ধকোলাসন, ভুজঙ্গাসন উপকারী। মানসিক বিকাশের জন্য মৎস্যাসন, হলাসন করা যায়। আপনার কোনো কাজে মনোযোগ আসছে না, করতে পারেন মেডিটেশন প্রাণায়াম। মুহাম্মদ হারুন বলেন, ইদানীং ভালো স্কুলে পড়ার প্রতিযোগিতার জন্য আমাদের অভিভাবকেরা একটি নির্ধারিত বয়সের আগেই শিশুকে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেন। ফলে যে মানসিক চাপ পড়ে, এতে পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সৃষ্টি করে। যেমন—মাথাব্যথা, চোখব্যথা, পড়া মনে না থাকা। এ বিষয়গুলো দূর করার জন্য যোগব্যায়াম খুবই ভালো। এ ছাড়া বাতের ব্যথা, বহুমূত্র, হাঁপানি, হূদরোগ, কিডনি সমস্যায় ওষুধের পাশাপাশি যোগব্যায়াম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যোগব্যায়াম বা ইয়োগা শারীরিক ও মানসিক বিকাশে উপকারী। তবে এ চর্চাটি করার সময় আপনাকে কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। পাঁচ বছর থেকে ৯৯ বছর বয়স পর্যন্ত যে কেউ যোগব্যায়াম করতে পারেন। তবে বয়স ও শরীরের অবস্থা অনুযায়ী যোগব্যায়ামের বিভিন্ন আসন নির্ধারণ করতে হবে।
* যোগব্যায়াম শুরু করুন খুব অল্প পরিশ্রম থেকে। তারপর ধীরে ধীরে মাত্রা বাড়িয়ে দিন।
* যোগব্যায়াম করার সময় কোনো আসন করতে খুব কষ্ট হলে সেটি করবেন না।
* আপনার শরীরের সহনীয়তার বিষয়টি খেয়াল রাখুন।
* ব্যায়াম করার জন্য খোলামেলা পরিবেশ নির্বাচন করুন।
* ব্যায়ামের ফলে ভালো ঘুম হচ্ছে কি না, সে দিকে দৃষ্টি দিন। কখনোই বই দেখে দেখে এটি অভ্যাস করবেন না।
অভিজ্ঞ প্রশিক্ষকের মাধ্যমে আগে আসনগুলো শিখে পরে নিজে নিজে অভ্যাস করুন। যোগব্যায়াম করার জন্য আসতে পারেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্রের ইয়োগা সেন্টারে। এটি সবার জন্য উন্মুক্ত।
তিনটি সেশনে এখানে যোগব্যায়াম করানো হয়।
রোববার, মঙ্গল, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ছয়টা থেকে সাড়ে সাতটা ও সাড়ে সাতটা থেকে আটটা ১৫ মিনিট পর্যন্ত মেয়েদের জন্য এবং আটটা ১৫ থেকে নয়টা পর্যন্ত ছেলেদের জন্য।
এ ছাড়া নগরীর বিভিন্ন যোগব্যায়াম প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে চলে আসতে পারেন—
ইয়োগা স্পিরিট ২০ সিদ্ধেশ্বরী লেন (কালীমন্দির সংলগ্ন) ঢাকা। ফোন: ০১৭১৪০৮৫১০৮
সুস্বাস্থ্য শান্তিনগর (পীর সাহেবের গলি) ঢাকা। লাইফ স্পিং ফোন: ০১৭১২১১৬৩২
হারমনি স্পা ইয়োগা অ্যান্ড অ্যারোবিকস ফোন: ০১৭১৬৭৪৯৪৭৯।
ডাসেল রোড-৯৫, বাড়ি-১৪, গুলশান, ঢাকা।
পারসোনা হেলথ ফোন: ০১৭১৩১৪৮২৮৮।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
:-?
আপনার একটি মতামত বা মন্তব্য আমাদের মত লেখকদেরকে ভালো কিছু লিখার অনুপ্রেরোনা যোগাই।তাই প্রতিটি পোস্ট পড়ার পর নিজের মতামত বা মন্তব্য জানাতে ভুলবেন না।তবে এমন কোন মতামত বা মন্তব্য করবেন না যাতে আমাদের মত লেখকদের মনে আঘাত করে !!