শিথিলায়ন খুবই সহজ। ধাপে ধাপে করলে আপনি খুব সহজেই দেহমনকে শিথিল করে নতুন প্রাণশক্তিতে উজ্জীবিত হতে পারবেন। শিথিলায়নে ধাপগুলো নিম্নরূপ :
১. ব্যায়ামের
শেষে ব্যায়ামের বিছানার উপর সটান চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ুন। দুহহাত শরীরের
দুহপাশে রাখুন। হাতের তালু উপরের দিকে থাকবে। দুহপায়ের মাঝে চার আঙুল
পরিমাণ ফাঁক থাকবে। মাথাটা ডানদিকে একটুখানি কাত হয়ে থাকবে।
২. এভাবে
শুয়ে পড়ার পর চোখ বন্ধ করুন। ধীরে ধীরে লম্বা দম নিন এবং ধীরে ধীরে দম
ছাড়ুন। দম নেয়ার সময় ধীরে ধীরে আপনার পেটের উপরিভাগ ফুলবে এবং দম ছাড়ার
সাথে সাথে পেটের উপরিভাগ চুপসে যাবে। চোখ বন্ধ করে দম নেয়ার সময় ভাবুন,
প্রকৃতি থেকে অফুরন্ত প্রাণশক্তি আপনার শরীরে প্রবেশ করছে আর দম ছাড়ার
সময় ভাবুন শরীরের সকল দূষিত ও ক্ষতিকর পদার্থ বাতাসের সাথে বেরিয়ে
যাচ্ছে। এভাবে ৫/৭ বার দম নিন, দম ছাড়ুন। দম নাক দিয়ে নেবেন, মুখ দিয়ে
ছাড়বেন। মনে করতে থাকুন যে আপনার শরীর নিস্তেজ হয়ে আসছে।
৩. এবার
মনের চোখে শরীরের সকল অঙ্গের উপর একবার নজর বুলিয়ে যান। নজর বোলানোর পর
প্রথমে মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করুন মাথার তালুর পেশীগুলোতে। অনুভব করুন সেখানে
রক্ত চলাচল বাড়ছে, একটু গরম-গরম লাগছে, একটু শিরশির করছে। পেশী শিথিল
হয়ে যাচ্ছে, পেশী ভারী হয়ে যাচ্ছে। এমনিভাবে আপনি এক এক করে কপাল, চোখ ও
চোখের পাতা, চোয়াল, ঠোঁট, জিহ্বা, মুখমণ্ডল, গলা, ঘাড়, কাঁধ, ডানহাত,
বামহাত, বুক, পিঠ, গোড়ালি ও পায়ের পাতায় মনোযোগ দিন। মনোযোগ দেয়ার সাথে
সাথে অনুভব বা কল্পনা করবেন যে সেখানে রক্ত চলাচল বাড়ছে, একটু গরম-গরম
লাগছে বা শিরশির করছে। এরপরেই কল্পনা করবেন যে, পেশী শিথিল হয়ে গেছে, পেশী
ভারী হয়ে গেছে। যে অঙ্গগুলোর নাম উল্লেখ করা হলো তার প্রতিটির জায়গায়
চার থেকে পাঁচ সেকেন্ড সময় ব্যয় রকুন। কল্পনা করুন যে এই অঙ্গগুলো ভারী
হয়ে যাচ্ছে এবং সারা শরীরে শিথিলতা স্রোতের মত উপর থেকে নিচের দিকে
প্রবাহিত হচ্ছে। এখানে এসে আপনি কল্পনা করুন যে আপনি যেন বরফের তৈরি। বরফ
গলে যেমন নিচের দিকে নামে তেমনি আপনার শরীরের প্রতিটি কোষ শিথিল হয়ে নিচের
দিকে চাপ সৃষ্টি করছে।
৪. এবার নাক দিয়ে খুব ধীরে ধীরে দম নিয়ে ধীরে ধীরে দম ছাড়ুন। ৫/৭ বার এরকম দম নিয়ে দম ছাড়ুন। শরীর আরও ভারী লাগতে শুরু করবে।
৫. এবার
শুধু দমের দিকে খেয়াল দিন। অনুভব ও অবলোকন করুন বাতাস কিভাবে নাক দিয়ে
ফুসফুসে গিয়ে আবার বেরিয়ে আসছে। আপনার দম এমনিতেই ধীর হয়ে গেছে। দমের
প্রতি খেয়াল দেয়ার পর আপনার শরীর আরও ভারী লাগতে শুরু করবে। কল্পনা করুন
যে আপনার শরীর আরও ভারী হয়ে গেছে।
৬. এবার
কল্পনা করুন মাধ্যাকর্ষণ শক্তি আপনার শরীরকে নিচের দিকে টানছে। অনুভব করুন
আপনার শরীরের ওজন বেড়ে গেছে। হাত, পা, মাথা, কাঁধ, শরীর সব ভারী হয়ে
মেঝের মধ্যে যেন ঢুকে যেতে চাইছে। এবার কল্পনা করুন আপনার অঙ্গগুলো এত ভারী
হয়ে গেছে যে সেগুলো আর জৈব পদার্থ নেই, জড় পদার্থে পরিণত হয়েছে। এবার
নিজের দেহকোষগুলোকে ভাবুন ও অনুভব করুন বালুকণা হিসেবে।
৭. এবার
অনুভব করুন আপনার শরীরের প্রতিটি অঙ্গ থেকে বালুকণাগুলো ঝুরঝুর করে ঝরে
পড়ছে। আঙুল, হাত, পা, পিঠ, কাঁধ সব ঝরে ঝরে পড়ে যাচ্ছে। অনুভব ও কল্পনা
করুন, আপনার শরীর বলে আর কিছুই নেই। আপনি এক বালুর স্তূপে পরিণত হয়েছেন।
৮. আপনি
এখন বালুর স্তূপ। ঠাণ্ডা বাতাস এসে ঝড়ের মত সমস্ত বালুকণাগুলো উড়িয়ে
নিয়ে চারদিকে ছড়িয়ে দিচ্ছে। বাতাস বালুকণাগুলোকে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়ায়
এবার অনুভব করুন, আপনার শরীর বলতে আর কিছুই নেই। আপনার বলতে এখন রয়েছে
শুধু আপনার মন, আপনার চেতনা। আপনি এখন পুরোপুরি শিথিল।
৯. দেহের
শিথিলতার সাথে সাথে মনের শিথিলতা আনয়নের জন্যে এবার সুন্দর দৃশ্যের
কল্পনা করুন। এ দৃশ্য হতে পারে সমুদ্রসৈকত, লেক বা নদীর পাড় বা এমন কোন
প্রাকৃতিক দৃশ্য যা আপনাকে আনন্দে আপ্লুত করে তোলে।
১০. এভাবে কিছুক্ষণ সময় অবিবাহিত হতে দিন। শরীর-মন শিথিল হওয়ার সাথে সাথে আশ্চর্য এক প্রশান্তি অনুভব করবেন।
১১. এই নিশ্চল-নিশ্চুপ অবস্থায় ৫/১০ মিনিট সময় অতিবাহিত করুন। লম্বা দম নিয়ে আস্তে আস্তে চোখ মেলুন। আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসুন।
এভাবে
শিথিলায়নের ফলে শরীরের প্রতিটি পেশী বিশ্রাম পেয়ে নতুন প্রাণশক্তিতে
উজ্জীবিত হয়ে উঠবে। দেহমনে পাবেন এক সুন্দর প্রশান্তি। বেশ আরামদায়ক
ঘুমের পর শরীর যেমন ঝরঝরে হয়ে ওঠে আপনার শরীরও তেমনি ঝরঝরে হয়ে উঠবে।
শান্ত মন ও প্রাণবন্ত দেহে পরবর্তী কাজগুলো করতে পারবেন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
:-?
আপনার একটি মতামত বা মন্তব্য আমাদের মত লেখকদেরকে ভালো কিছু লিখার অনুপ্রেরোনা যোগাই।তাই প্রতিটি পোস্ট পড়ার পর নিজের মতামত বা মন্তব্য জানাতে ভুলবেন না।তবে এমন কোন মতামত বা মন্তব্য করবেন না যাতে আমাদের মত লেখকদের মনে আঘাত করে !!